জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ:
টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে রাখাইনের রোহিঙ্গারা এখনো আসছেন। মিয়ানমার দক্ষিণ রাখাইনের ধাওনখালী চরে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গারা নৌকা সংকটসহ দু’পার সীমান্তে নানা বাঁধার মুখেও অভিনব কৌশলে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল দিনে ভেলায় ভেসে ও রাতে নৌকায় চেপে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানা গেছে।

রবিবার বিকেল ৫ টায় নাফ নদের এপারে সাবরাং নোয়াপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৮ টি ভেলায় ৩৪৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৯৯ জন শিশু, ১১৯ জন নারী ও ৭৮ জন পুরুষ ছিল। এদের মানবিক সহায়তা দিয়ে বিজিবি নোয়াপাড়া বিওপির হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিজিবি সূত্র জানিয়েছেন, উর্ধ্বতন নির্দেশে এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভেলায় ভেসে আসা রাখাইনের বুসিডং এলাকার রোহিঙ্গা নারী আমিনা খাতুন বলেন, ‘ মিয়ানমার সেনারা আমার নিজের বাড়ি ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল, গ্রামের অনেক পুরুষকে তারা অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে, এখন তারা আমাদের স্বাভাবিক চলাচল করতে দিচ্ছিলনা, তাই আমরা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিতে ১৫ দিনে আগেই ধাওনখালী সীমান্তে এসে নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সেখানে এসে কোন নৌকাও মিলছিলনা বাংলাদশে আসতে। তাই বাধ্য হয়ে ভেলায় ভেসে ঝুকি নিয়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে এপারে চলে এসেছি।’

রোহিঙ্গা যুবক আলী আহমদ বলেন,‘ওপারের সেনারা আমাদের মতো যুবকদের ডেকে নিয়ে যাচ্ছে, যাদের নিয়ে গিয়েছিল আমরা তাদের কারো খোঁজ পায়নি। এছাড়া সেনা ও মগরা আমাদের ক্ষেতের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কোথাও বেরুতে দিচ্ছিলনা। চিকিৎসা কিংবা দরকারি কাজেও ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেনা। তাই সেখানে আমাদের খুব অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তত জীবন বাচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ ছিলনা।’

ওই যুবক আরো বলেন, ‘ আমরা ধাওনখালী চর থেকে ভোরেই ভেলায় ওঠছিলাম। কিন্তু কিছুটা ভাটার টানে আমাদের ভেলাটি সামনের দিকে এগুচ্ছিলনা, পরে জোয়ারের টানে আমরা এপারে পৌঁছেছি। আমাদের সাথে থাকা শিশু ও মায়েরা ভয়ে খুব কান্নাকাটি করছিল। এপারে এসেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি।’

ভেলায় আসা রোহিঙ্গারা আরো জানিয়েছেন, ওপারের ধাওনখালী চরে এখনো হাজার দশেক রোহিঙ্গা এপারে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু তারা সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সহসা কোন নৌকা পাচ্ছেনা। দু’একটি নৌকা ওপারে ভিড়লেও নৌকার মাঝিরা রোহিঙ্গাদের এপারে নিয়ে আসতে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। নৌকা সংকটে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সব রোহিঙ্গাদের নৌকায় চেপে বাংলাদেশে ঢুকা সম্ভব হয়নি। তাই তারা নিজেদের উদ্যেগে জারিকেন ও বাঁশ দিয়ে ভেলা বানিয়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন বলে জানায়।

উল্লেখ্য, এ নিয়ে গত ৮ নভেম্বর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৩ টি ভেলায় নারী শিশুসহ ১১৩৩ রোহিঙ্গা নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর আগে গত ১১ অক্টোবর থেকে ৭ দফায় ৬১ রোহিঙ্গা নাফ নদ সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। তবে সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে আসতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা অক্ষম হওয়ায় মূলত তারা ভেলা বানিয়ে এপারে আসার উদ্যেগ নিয়েছেন বলেও জানায়।

এদিকে ভেলায় আসা রোহিঙ্গারা ছাড়াও নৌকায় নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া সৈকত, হারিয়াখালী সৈকত, শামলাপুর সৈকত , নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া, নোয়া পাড়া পয়েন্টসহ উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে কয়েশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।